ফিজিওথেরাপি হলো ভৌত বিজ্ঞানের চিকিৎসা, যেখানে তাপ, চাপ ও বল প্রয়োগের সমন্বয়ে শারীরিক নড়ন-চড়ণ ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এটি একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসাব্যবস্থা, যেখানে শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতির চিকিৎসকরা ফিজিওথেরাপিস্ট নামে পরিচিত।
বিভিন্ন শারীরিক অক্ষমতার জন্য ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:
*স্পাইনাল কর্ড বা জয়েন্টের রোগ
*বুক ও পিঠের ব্যথা
*আঘাতজনিত ব্যথা
*নার্ভের সমস্যা
*সেরিব্রাল পালসি
*শ্বাসকষ্ট
* স্ট্রোক
*অপারেশনের পর কোন ডিসঅর্ডার ইত্যাদি
রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা আলাদা হয়। যেমন:
*ম্যানুয়াল থেরাপি
*মোবিলাইজেশন
*মুভমেন্ট উইদ মোবিলাইজেশন
*থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ
*ইনফিলট্রেশন বা জয়েন্ট ইনজেকশন
*পোশ্চারাল এডুকেশন
*আরগোনমিক্যাল কনসালটেন্সি
*হাইড্রোথেরাপি
*ইলেকট্রোথেরাপি ইত্যাদি
ফিজিওথেরাপিস্টের প্রকারভেদ
বাংলাদেশে বিভিন্ন মানের ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছেন
কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট: কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট হতে চাইলে কমপক্ষে ৪ বছরের কোর্স ও ১ বছরের ইন্টার্নশিপসহ ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ব্যাচেলর বা স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র ফিজিওথেরাপি বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীকেই ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ বলা হয়ে থাকে।
ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিস্ট: যিনি ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন, তাকে ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিস্ট বলা হয়। তিনি একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে পারবেন।
অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিওথেরাপিস্ট: মাত্র ১ বছরের কোর্স সম্পন্ন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিওথেরাপিস্ট হওয়া যায়। তবে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিজিওথেরাপিস্টকে অবশ্যই একজন কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দিতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (NITOR): সরকারি প্রতিষ্ঠান নিটোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করতে পারবেন।
৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি কোর্সে ভর্তি হতে চাইলে প্রার্থীকে অবশ্যই জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়সহ উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ফিজিওথেরাপির উপর পোস্টগ্র্যাজুয়েট কোর্স পরিচালিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধীনে।
সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড (CRP): এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউটে (BHPI) স্নাতক ও ডিপ্লোমা পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলোতে ভর্তি হতে হলে আপনাকে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা পাশ হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক কোর্সগুলো পরিচালিত হয় সাভার ক্যাম্পাসে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীন পরিচালিত ডিপ্লোমা প্রোগ্রামগুলো নেয়া হয় মিরপুর ক্যাম্পাসে।
গণবিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ইন্টার্নশিপসহ ৫ বছর মেয়াদী স্নাতক ও ২ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। স্নাতক পর্যায়ে পড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক। অন্যদিকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ন্যূনতম যোগ্যতা এমবিবিএস অথবা বিএসসি ইন নার্সিং অথবা ফিজিওথেরাপি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি।
স্টেট কলেজ অফ হেলথ সাইন্সেস: ঢাকায় অবস্থিত স্টেট কলেজ অফ হেলথ সায়েন্সেস স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি বিষয়ে পড়ার সুযোগ দিয়ে থাকে।